স্থানীয়ভাবে কোন অংশে পূঁজ সঞ্চিত হলে তাকে Abscess বা ফোঁড়া বলে। টিস্যুতে, অঙ্গে বা কোন আবদ্ধ স্থানের টিস্যুতে দূষিত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে Abscess সৃষ্টি হয়।
প্রকারভেদ (Classification)
A. Abscess এর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে
- বাহ্যিক ফোঁড়া বা External abscess, যেমন
- চামড়ার নীচে ফোঁড়া (Subcutaneous abscess),
- স্তনে ফোঁড়া (Breast abscess),
- প্যারোটিড গ্ল্যান্ডে ফোঁড়া (Parotid abscess),
- মলদ্বারের পার্শ্বে ফোঁড়া (Peri-anal abscess) ইত্যাদি।
- আভ্যান্তরিন ফোঁড়া বা Internal abscess, যেমন
- যকৃতে ফোঁড়া (Liver abscess),
- মস্তিস্কে ফোঁড়া (Brain abscess),
- ফুসফুসে ফোঁড়া (Lung abscess),
- এ্যাপেন্ডিক্সে ফোঁড়া (Appendicular abscess) ইত্যাদি।
B. Abscess এর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে
- পায়োজেনিক এ্যাবসেস (Pyogenic abscess).
- পায়েমিক এ্যাবসেস (Pyemic abscess).
- কোল্ড এ্যাবসেস (Cold abscess বা Tubercular abscess).
পায়োজেনিক,পায়েমিক এবং কোল্ড এ্যাবসেস (Pyogenic, Pyemic & Cold abscessPyogenic, Pyemic & Cold abscess)।
①. পায়োজেনিক এ্যাবসেস (Pyogenic abscess).
পায়োজেনিক অর্গানিজম বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামন দ্বারা যে সকল ফোঁড়া হয় তাদের Pyogenic abscess বলা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরীরের বাইরে হয় বলে একে সুপারফিসিয়াল এ্যাবসেস (Superficial abscess) ও বলা হয়। এ ধরনের ফোঁড়া,
⮡ বেশ বড় আকৃতির হয়।
⮡ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংখ্যায় একটি বা দুইটি হয়। কদাচিত ততোধিক হতে পারে।
⮡ ফোঁড়ায় প্রচুর পূঁজ থাকে।
⮡ পূঁজে দূ:র্গন্ধ থাকতে পারে।
②. পায়েমিক এ্যাবসেস (Pyemic abscess).
এ ধরনের ফোঁড়া সংখ্যায় অনেক এবং গুচ্ছাকারে হয়। সমস্ত শরীরে একসাথে অনেক এবং বিভিন্ন স্থানে হয়। এ ধরনের ফোঁড়া,
⮡ আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট বা মাঝারী হয়।
⮡ ভীষন ব্যথা থাকে।
⮡ প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যথার সাথে,
⮡ জ্বর থাকে।
⮡ শরীরে শীতভাব থাকে।
⮡ ঘাম হওয়া থাকে।
⮞. সচরাচর হতে দেখা যায়,
⮡ মুখমন্ডলে।
⮡ কপালে।
⮡ মাথায়।
⮡ ঘাড়ে।
⮞. প্রায় সময় ফোঁড়া পাকেও না, বসেও না।
⮞. (কাটলে/চাপলে/ফাটলে) রক্ত মিশ্রিত পূঁজ দেখা যায়।
③. কোল্ড এ্যাবসেস (Cold abscess).
সংক্রামিত টিউবারকুলার টিস্যু থেকে এ ধরনের ফোঁড়া সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ফোঁড়ায় ,
⮞. কেবল প্রচুর পরিমানে পূঁজ থাকে।
⮞. কোন প্রকার ব্যথা বা প্রদাহ থাকে না, তবে কারো কারো কদাচিত ব্যথা থাকতে পারে।
⮞. বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি (Lymph gland) অধিক আক্রান্ত হয়।
⮞. সচরাচর হতে দেখা যায়, (যে সকল স্থানে Lymph gland's বেশী থাকে), যেমন
⮡ বগলে।
⮡ গলায়।
⮡ ঘাড় বা গলার পার্শ্বে।
⮡ উরুর সংযোগস্থলে।
ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical feature)
লক্ষন (Symptoms).
⮊. প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত স্থান বেশ ফুলে ওঠে এবং শক্ত হয়ে যায়।
⮊. ধীরে ধীরে স্থানটি লালচে বর্ন ধারন করে।
⮊. ভীষন ব্যথা থাকে। ব্যথার সাথে স্পর্শকাতরতা থাকতে পারে।
⮊. ব্যথা দপদপানি (Throbbing) প্রকৃতির হয়।
⮊. অনেক সময় জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব থাকে।
⮊. আক্রান্ত অংশে উত্তাপ/গরম অনুভব হতে পারে।
⮊. ধীরে ধীরে পূঁজ সি ত হয়ে,
⮲. আরো বড় হয়ে উঠতে পারে।
⮲. ব্যথা আরো তীব্র হয়।
⮲. উত্তাপ আরো বৃদ্ধি পায়।
⮲. আশেপাশের চামড়া পাতলা আঁশের মতো উঠে আসে।
⮊. ফোলা অংশের শীর্ষে ছোট ছোট এক বা একাধিক হালকা হলুদ বা সাদাটে বর্নের “মুখ” দেখতে পাওয়া যায়।
চিন্থ (Sign).
⮊. আক্রান্ত স্থান ফোলা , লালচে বর্নের এবং শক্ত (হতে পারে)।
⮊. স্পর্শকারতা থাকতে পারে।
⮊. আক্রান্ত স্থানে উত্তাপ অনুভ‚ত হতে পারে।
⮊. জ্বর থাকতে পারে।
ব্যাবস্থাপনা (Management)
(বাহ্যিক ফোঁড়া বা External abscess এর ক্ষেত্রে),
✅. অবশ্যই Sterilization Maintain করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে,
আক্রান্ত স্থান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
যাতে অপেক্ষাকৃত কম ঘামে অথবা কম ভেজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যথাসম্ভব সতর্কতার সাথে ফোঁড়া ও তার আশেপাশের লোম পরিস্কার করে কেটে ফেলতে হবে।
❌. কোন প্রকার তৈল ব্যবহার করা যাবে না, তাতে ইনফেকশন হবার ঝুঁকি থাকে।
❌. চুলকানো যাবে না, এবং এ উদ্দ্যেশ্যে রোগীর নখ ছোট করে ফেলতে হবে।
❌. সরাসরি ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার অনুচিত। ব্যবহার করলে Distil water এর সাথে Dilute করে ব্যবহার করা উচিত।
❌. জোর করে ফোঁড়া ফাটানো উচিত নয় এবং ফোঁড়া ফাটানোর জন্য ব্যবহৃত ঔষধগুলো সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত, বিশেষ করে,
Internal abscess বা আভ্যান্তরীন ফোড়া-এর ক্ষেত্রে।
দেহের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ, যেমন চোখ, কানের ভেতর ইত্যাদি স্থানে বা তার খুব নিকটবর্তী স্থানে abscess হলে।
❌. ফোঁড়া ফাটানোর জন্য বিভিন্ন গাছের কাঁটা ব্যবহার করা উচিত নয়।
✅. ফোঁটা ফাটানোর জন্য সুঁচ বা বেøড ব্যবহার করলে তা নতুন এবং জীবানুমুক্ত হওয়া আবশ্যক।
✅. রোগীর ডায়াবেটিস মেলিটাস থাকলে অবশ্যই তার Management দিতে হবে।
✅. Vitamin C জাতীয় খাদ্য গ্রহন করা উত্তম।
⮚. সার্জিক্যাল চিকিৎসা
✠. Incision & adequate drainage of abscess ( by Hilton's method).
✠. নিয়মিত Dressing করতে হবে।
⮲. ড্রেসিং করার সময় প্রথমে ভালো ভাবে হাত পরিস্কার করে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
⮲. প্রতিবার ডেসিং এর সময় নতুন, পরিস্কার এবং জীবানুমুক্ত গজ-ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত গজ-ব্যান্ডেজগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে বা মাটিতে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
✠. ড্রেসিং করার সময় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ক্যালান্ডুলা বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
✠. অথবা টিংচার আয়োডিন, হেক্সিসল, ভায়োডিন বা পভিসেপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
“ জেনে রাখা ভালো ”
“ জেনে রাখা ভালো ”
Hilton's method কি ?
ডা: জন হিলটন (১৮০৫-১৮৭৮) একজন ব্রিটিশ সার্জন ছিলেন। তার সার্জিক্যাল কৌশল কে “হিলটন ম্যাথড” বলা হয়। শরীরের কিছু বিপদজনক এ্যানাটমীক্যাল স্থান আছে, যেমন বগল, ঘাড় বা গলা,উরুর সংযোগস্থল ইত্যাদি। বিপদজনক এই অর্থে যে, এসব অংশের খুব নিকটবর্তী ভাবে বিভিন্ন রক্তনালী, স্নায়ু, লসিকানালী দেহের অন্য স্থানের সাথে সংয়ুক্ত হয়েছে। এ কারনে এসব অংশের ফোঁড়া অপারেশন অনেক বিপদজনক। তিনি মোট ১০টি ধাপে Abscess এ Incision এবং drainage দেবার কথা বলেছেন। সেগুলোর আংশিক নীচে উল্ল্যেখ করা হলো,
●. প্রথমে আক্রান্ত স্থান জীবানুমুক্ত করতে হবে
●. লোকাল এ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করতে হবে
●. প্রথমে গভীরভাবে ফোঁড়ায় Incision দিতে হবে
●. সাইনাস ফরসেপ দিয়ে Abscess ছিদ্র করতে হবে
●. পূঁজ নির্গত না হলে আরো গভীরে Incision দিতে হবে
●. ক্লোজড ফরসেপ দিয়ে পূঁজ পূর্ন ফোড়ার পূঁজ সম্পূর্ন অপসারন করতে হবে
●. সার্জিক্যাল ব্লেড দিয়ে (X) চিন্থের মতো Incision দিতে হবে যাতে একটি আঙ্গুল প্রবেশ করানো যায়।
●. ভেতরের সব পূঁজ নি:স্কাশন করে Drainage tube দিতে হবে।
●. বড় এ্যাবসেস এ সেলাই দেবার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত Dressing খুবই গুরুত্বপূর্ন।
●. Dressing এর সময় ক্ষতের আশেপাশে থেকে রক্ত আসলে তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারন এটা অনেকসময় ক্ষত শুকানোর চিন্থ করে। রক্ত মানেই অক্সিজেন এবং অক্সিজেন মানেই টিস্যুতে প্রানসঞ্চার আর নতুন টিস্যুর জন্ম।
মনে রাখবেন
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
ডা. রাতুল মাহমুদ সজল
বিএইচএমএস
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।