এ্যডারম্যাটোগ্ল্যাফিয়া (Adermatoglyphia) একটি দূর্লভ প্রকৃতির অবস্থা, যেক্ষেত্রে ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকে না। সাধারনভাবে এটি স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা না হলেও, এরা দৈনন্দিন অফিসে অথবা বিদেশে গমনাগমন, নাগরিকত্ব, বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, ভোটাধিকার প্রদান ইত্যাদিসহ নানা ধরনের (সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত) বিশেষত: যেসব ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়, সেসব ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হন অথবা সাধারন নাগরিক সুবিধা বি ত হন।
একথা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত যে, প্রতিটি মানুষের তো বটেই প্রতিটি আঙ্গুলের ছাপ (Fingerprints) সম্পূর্ন আলাদা এবং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, এমনকি অনেকে মনে করলেও আসলে জমজ সন্তানদের ক্ষেত্রেও তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পূর্ন আলাদা। আরো অদ্ভুত যে, কেউ যদি তার অপরাধ গোপন করার উদ্দেশ্যে অথবা কোন কারনবশত: আঙ্গুলের ত্বক নষ্ট করে ফেলেন অথবা নষ্ট হয়ে যায়, তবে পুনরায় নতুন ত্বকের আবির্ভাবের সাথে সাথে আগের সেই ফিঙ্গারপ্রিন্টও ফিরে আসে।
কারন (Causation)
ফিঙ্গারপ্রিন্ট না থাকার প্রকৃত কোন কারন এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। তবে এখানে সাধারণ কিছু কারন উল্লেখ করা হলোঃ
- পারিবারিক এবং বংশগত কারন।
- বিশেষ কিছু জেনিটিকস্ কারন।
- বার্ধক্য।
- হাতের তালু পুড়ে যাওয়া।
- হাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- শরীরে অত্যাধিক কম ঘাম হওয়া।
- সোরিয়াসিস (Psoriasis)।
- এ্যটপিক ডার্মাটাইটিস (Atopic dermatitis)।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More affected peoples)
- বংশগতভাবে অথবা জেনিটিকস্ জনিত হলে যে কেউ যেকোন বয়সে আক্রান্ত হতে পারে।
- বৃদ্ধরা অধিক আক্রান্ত হন।
- মোটা এবং বয়স অনুপাতে বেঁটে মানুষরা অধিক আক্রান্ত হন।
- পিতামাতা অথবা পিতামাতার কোন একজনের এ্যডারম্যটোগ্ল্যাফিয়া থাকলে তাঁদের সন্তানদের হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
- পরিবারে কারো থাকলে অন্য সদস্যদের হবার সম্ভাবনা থাকে।
লক্ষন (Symptoms)
⮊ আঙ্গুলের ছাপ না থাকা প্রধান লক্ষন।
⮊ সাধারনত: এ্যডারম্যটোগø্যাফিয়ার কারনে ব্যক্তি তাঁর দৈনন্দিন জীবনে কোন শারিরীক বা মানসিক সমস্যা অনুভব করেন না, কিন্তু জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্বের সনদ নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের সময় ভীষন অসুবিধার মধ্যে পতিত হন এবং তাঁর এই শারিরীক সমস্যা সর্ম্পকে অবগত হন।
⮊ অধিকাংশক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পায়ের তালুতে অত্যাধিক ঘাম হওয়া এবং হাত-পা ভেজাভেজা থাকতে দেখা যায় (Hyperhydrosis)।
চিন্থ (Signs)
আঙ্গুলের ছাপ (ঋরহমবৎঢ়ৎরহঃ) না পাওয়া, এমনকি দুই হাতের কোন একটি আঙ্গুলেরও নয়।
হাত খুব নরম, ভেজাভেজা এবং কিছুক্ষন মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় রাখলে হাতের তালু ঘেমে যায়।
ব্যবস্থাপনা (Management)
সাধারনত: এ রোগ অনারোগ্য। তবে অনেক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক একে লক্ষনসাদৃশ্যে আরোগ্য যোগ্য বলেছেন। অনেকে দাবী করেছেন, দীর্ঘদিন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় (অবশ্যই সদৃশ্য লক্ষনে) রোগীর আঙ্গুলের রেখাগুলো ক্রমে ফুটে উঠেছে।
Hyperhydrosis থাকলে যথাসম্ভব হাত শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং সদৃশ্যলক্ষনে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতে হবে। (Hyperhydrosis দেখুন)।
শেষ বিবেচনায় (Final Thought)
বার্ধক্যজনিত কারনে হলে এবং পরিবারের একাধিক সদস্য একই সমস্যায় ভুগলে এটিকে মেনে নেয়ার পরামর্শ দেয়া-ই উত্তম। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সমস্যা সমাধানের একটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে গবেষকদের চিন্তা করা সময়ের দাবী রাখে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মেডিকেল সার্টিফিকেট (Medical certificate) দেয়া উচিত যাতে তিনি দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা থেকে একটু হলেও অব্যহতি পান। যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।