এ্যালার্জি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থা পরিবেশ বা আশেপাশের স্বাভাবিক বস্তু, যেমন তুলোর সূক্ষ আঁশ, ধুলো, প্রানীজ ক্ষুদ্র লোম বা আঁশ, বিশেষ কিছু খাবার, নির্বিষ পোঁকামাকড়ের কামড় ইত্যাদির প্রতি তীব্র, মারাত্মক এবং অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, অর্থাৎ বাইরের যে সকল বস্তু বা কনা অন্যের জন্য নিতান্তই স্বাভাবিক (অথবা অস্বাভাবিক) এবং (দুষ্ট অথবা) নির্দোষ প্রকৃতির, এ্যলার্জি আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে তা-ই অত্যন্ত মারাত্মক ও বিদপজনক।
এ্যলার্জি এর চরম দশা- এনাফাইলেক্সিস (Anaphylaxis)
এ্যালার্জিজনিত শারিরীক প্রতিক্রিয়া অনেকসময় এত ভয়ানকভাবে প্রকাশ পায় যাতে রোগীর প্রাণসংশয় পর্যন্ত দেখা দেয়। এ্যলার্জিজনিত এই মারাত্মক ও প্রানসংশয়ী অবস্থাকে এনাফাইলেক্সিস (Anaphylaxis) বলে। এনাফাইলেক্সিস একটি মারাত্মক অবস্থা এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ্যালার্জি সৃষ্টিকারী এইসকল পদার্থকে এ্যালার্জেনস্ (Allergens) বা এ্যান্টিজেন (Antigen) বলা হয়।
এসব বুঝতে গেলে আমাদের এ্যান্টিবডি সম্পর্কে ধারণা থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
Antibody কি?
আমরা জানি, বাইরের ক্ষতিকর পদার্থ বা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস বা অন্য অনুজীবের প্রোটিন থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য দেহের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Immune system) আছে। Immune system একটি বিশাল শাখা, সুতরাং বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষেপে আমরা সামগ্রীকভাবে শরীরের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এ্যান্টিবডি (Antibody) বলবো।
এ্যান্টিবডি এর প্রকারভেদ
এ্যান্টিবডি বুঝতে গেলে আমাদের এ্যান্টিবডির প্রধান পাঁচটি প্রকারভেদ এবং কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন ইমিউন সিস্টেম (Complement proteins immune system) বুঝতে হবে। প্রধান এ্যান্টিবডিগুলো হলো,
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন G (IgG),
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন A (IgA),
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন M (IgM),
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন D (IgD),
- ইমিউনোগ্লোবিউলিন E (IgE).
এদের মধ্যে ইমিউনোগ্লোবিউলিন E (IgE), শ্বেত রক্তকনিকার ইয়েসিনোফিল (Eosinophils) এর সহায়তায় বিভিন্ন পরজীবি ধ্বংসে বিশেষ সহায়তা করে। শরীরে কোন এ্যান্টিজেন (Antigen) প্রবেশ করলে ইমিউনোগ্লোবিউলিন E (IgE), কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন সিস্টেমের মাষ্ট সেলস্ (Mast cells) এর সাথে আবদ্ধ হয় এবং স্থানিকভাবে (Locally) প্রদাহকে ত্বরান্বিত করে। অপরপক্ষে, কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন সিস্টেমের বিশেষ কিছু প্রোটিন মাষ্ট সেলস্ এবং ব্যাসোফিল (Basophil) কে সক্রিয় করার মাধ্যমে Sensitised tissue cells থেকে হিষ্টামিন (Histamine), হেপারিন (Heparin) এবং অন্যান্য তরল পদার্থকে নিঃসরণে উদ্বিপ্ত করে, ফলে
●. স্থানটিতে রক্তের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং রক্তের জলীয় অংশ (Blood plasma) রক্তনালীর দেয়াল ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং স্থানটি ফুলে ওঠে।
●. হিস্টামিন থাকার কারনে সেই ফোলা স্থানটি চুলকায় বা সুড়সুড় করে।
প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণে,
●. স্থানটি লাল হয়ে যায়।
●. স্থানটি গরম হয়ে যায়।
●. স্থানটিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
●. টিস্যুতে প্লাজমা প্রোটিন সঞ্চিত হয়, যেটাকে আমরা সম্মিলিতভাবে এ্যালার্জি বলি।
এ্যালার্জির প্রকারভেদ
এ্যালার্জি, শরীরের যে কোন স্থানে হতে পারে, আভ্যান্তরীন অথবা বাহ্যিক উভয় প্রকারেরই হতে পারে। অবস্থান এবং প্রকারভেদে তাদের নাম আলাদা। যেমন,
- ত্বকের এ্যলার্জি (Skin allergy)।
- খাবারে এ্যালার্জি (Food allergy)।
- শ্বাসগ্রহনের মাধ্যমে এ্যালার্জি উৎপাদী বস্তুর প্রবেশ (Allergen inhalation)।
- এ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ (Allergic rhinitis)।
- এ্যালার্জিজনিত হাঁপানী (Allergic asthma)।
- ঔষধজনিত এ্যালার্জি (Drugs allergy)।
- সালফা ড্রাগ।
- পেনিসিলিন, ইত্যাদি।
- ধূলো-ময়লা জনিত এ্যালার্জি (Dust allergy)।
- ধাতব পদার্থজনিত এ্যালার্জি (Metal allergy)।
এ্যালার্জির কারণ (Causation)
অনেকসময় জেনিটিকস্ভাবে মিউটিশনের মাধ্যমে Interlukin 4 নামক সাইটোকাইন (Cytokine) রুপান্তর ঘটে যা ইমিউনোগ্লোবিউলিন E (IgE) উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে Allergen বা Antigen প্রবেশ করার সাথেসাথেই উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ, এ্যালার্জি অনেকসময় জেনিটিকস্ভাবে হতে পারে, তবে এটি স্পর্শ সংক্রামক নয়।
হাইজিন হাইপোথেসিস (Hygiene hypothesis) এ্যালার্জির আরো একটি গুরুত্বপূর্ন কারণ।
বিভিন্ন প্রকার এ্যালার্জি নিয়ে অন্যান্য ব্লগে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুনঃ
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
One thought on “এ্যলার্জি (Allergy)”