এ্যালোপেশিয়া (Alopecia) বা কেশপতন বা চুল পড়ে যাওয়া সচরাচর দৃষ্ট একটি সমস্যা। স্বাভাবিক একজন মানুষের শরীর থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টি চুল ঝরে পড়ে, যদিও পরিবেশ এবং অবস্থাভেদে এর কিছু তারতম্য হতে পারে। কমবেশী পৃথিবীর সবদেশেই, পুরুষ অপেক্ষা নারীদের চুল অধিক ঝরে।
সাধারন প্রকৃতির চুল ঝরাকে কোন রোগ বলা যাবে না এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকা, দুঃশ্চিন্তা (এমনকি চুল ঝরা নিয়েও) মুক্ত জীবনযাপন করা, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্রগ্রহন, যথেষ্ট নিদ্রা ও বিশ্রাম ইত্যাদি নিয়ম মানলে চুলপড়া এমনিতেই কমে আসে। তবে অত্যাধিক চুল ঝরাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
কারন (Causation):
⮚. (ত্বকে দাগমুক্ত এ্যালোপেশিয়া)
⮊. বয়স এবং বার্ধক্য।
⮊. মানসিক চাপ ও অবসাদ।
⮲. পারিবারিক অশান্তি।
⮲. অন্যের দ্বারা বারবার মানসিকভাবে আহত হওয়া।
⮊. অত্যাধিক মানসিক বা শারিরীক পরিশ্রম এবং অনিদ্রা।
⮊. টাকপড়া।
⮊. বংশগত কারন।
⮊. বিভিন্ন ঔষধ, যথা
⮲. ভিটামিন এ বিষাক্ততা।
⮲. জন্মবিরতীকরন বড়ি।
⮲. কেমোথেরাপী।
⮲. রেডিওথেরাপী।
⮊. সন্তান জন্মদান।
⮊. গর্ভধারন।
⮊. বিভিন্ন রোগজনিত, যেমন,
⮲. টাইফয়েড জ্বর।
⮲. হাইপোথাইরয়েডিজম।
⮲. মারাত্মক রক্তস্বল্পতা।
⮲. ভিটামিনের ঘাটতি।
⮚. (ত্বকে দাগযুক্ত এ্যালোপেশিয়া)
⮊. মাথার ত্বকে আঘাতজনিত স্থায়ী ক্ষতচিন্থ।
⮊. পুড়ে যাওয়া।
⮲. আগুনে পোড়া।
⮲. বিকিরণজনিত (Radiation)।
⮲. রেডিওথেরাপী।
⮲. বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ত্বকের উপরাংশে প্রয়োগ।
⮊. জীবানুজনিত সংক্রামন।
⮲. বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রামনজনিত।
⮲. স্কেরোডার্মা (Scleroderma)।
⮲. লাইকেন প্ল্যানাস (Lichen planus)।
⮊. নিওপ্লাজম (Neoplasm)।
⮊. সার্কোয়ডোসিস (Sarcoidosis)।
শরীরের কতটা অংশের চুল ঝরেছে তার উপর নির্ভর করে একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা এ্যলোপেশিয়া এরিয়েটা (Alopecia areata) বা ত্বকের অ লভিত্তিক বা স্থানিক কেশপতন, বিশেষত: মাথার স্থানে স্থানে চুল পড়ে যাওয়া, এ্যলোপেশিয়া টোটালিস (Alopecia totalis) বা সম্পূর্ন মাথার চুল ঝরে যাওয়া এবং এ্যলোপেশিয়া ইউনিভার্সালিস (Alopecia universalis) বা সর্বশরীরের চুল ঝরে যাওয়া।
আধুনিক এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে পুরুষদের চুলপড়া বা টাকপড়া রোধে একটি ঔষধ আবিস্কৃত হয়েছে (নাম জানার প্রয়োজন নেই), ঔষধটি সেবনে এ্যলোপেশিয়া আরোগ্য (?) হয়, কিন্তু স্থায়ীভাবে পুরুষত্বহীন করে দেয়।
চুল এবং চুলপড়া নিয়ে কিছু ভ্রান্তধারনা :
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং লোককথার সূবাদে চুল নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে কিছু ভ্রান্তধারনা আছে, যেমন “চুলে তেল দিলে চুল ঘন, কালো এবং লম্বা হয়”- এটি সম্পূর্ন ভ্রান্ত একটি ধারনা ও অন্ধবিশ্বাস । “চুল শক্ত করে বাঁধলে চুল শক্ত হয়”- না, বরং চুলের গোড়া আরো দূর্বল হয় এবং চুলপড়া বৃদ্ধি পায়।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to):
যে কেউ যে কোন বয়সে আক্রান্ত হতে পারে।
বয়স্ক পুরুষরা এবং মধ্যবয়সী নারীরা অধিক আক্রান্ত হন।
নারীরা অধিক আক্রান্ত হন (তবে ইধষফহবংং বা টাকপড়ায় নারীরা কম আক্রান্ত হন)।
যাঁরা মানসিক চাপে ভোগেন তাঁরা অধিক আক্রান্ত হন।
যাঁরা অপুষ্টিতে ভোগেন তাঁরা অধিক আক্রান্ত হন।
যাঁরা দীর্ঘকালীন রোগে ভোগেন, তাঁরা অধিক আক্রান্ত হন।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
- সাধারনত: মাথার চুল অধিক আক্রান্ত হয়।
- খুব ধীরে ধীরে সূত্রপাত হবে।
- প্রথমে অল্প থেকে মাঝারী এবং পরে, দৈনিক অনেক পরিমানে চুল পড়তে থাকবে।
- বিশেষত: গোসলের সময়, চুল আঁচড়ানোর সময় একসাথে অনেক পতিত চুল দেখতে পাওয়া যাবে।
- চুলের ঘনত্ব ক্রমশ: কমতে থাকবে।
চিন্থ (Signs)
- চুলের ঘনত্ব কম।
- পরিধেয় বস্ত্রে চুল পাওয়া যাবে।
- মাথার ত্বকের রোগজনিত কারনে হলে, তা দেখতে পাওয়া যাবে।
ব্যবস্থাপনা (Management)
- রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।
- রোগের প্রকৃতকারণ নির্নয় করতে হবে এবং যদি তা আরোগ্য পথে বাধা সৃষ্টি করে তা দূর করতে হবে।
- লক্ষনসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি, চুলঝরে যাওয়ার কথা ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে।
- মানসিক চাপ ও অবসাদমুক্ত থাকার পরামর্শ দিতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহনের পরামর্শ দিতে হবে।
- অপ্রয়োজনীয় ঔষধ পরিহারের পরামর্ম দিতে হবে।
- ঘন দাঁতযুক্ত চিরুনী ব্যবহার পরিহার করার পরামর্ম দিতে হবে।
- অনেকে গোসল করার পর খুব জোরে জোরে মাথা ঘষেন, যা চুলের জন্য ক্ষতিকর।
প্যাথলজীক্যাল ইনভেষ্টিগেশান (Pathological investigation)
- গুরুত্বপূর্ন নয়।
এ্যালোপেশিয়া (Alopecia) বা চুলপড়া নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
2 thoughts on “এ্যালোপেশিয়া (Alopecia) বা চুলপড়া”