নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয় (ডাঃ নওয়াব আলী প্রফেসরের বাসা), ৩৬৬, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
+৮৮০-১৭২০-৬৬৭১১৭
এনাল ফিসার (Anal Fissure)

মলদ্বারের মিউকোসা লেয়ারে ফাটল বা চিড় (Crack) সৃষ্টি হলে তাকে এনাল ফিসার (Anal Fissure) বলে। এটি মলদ্বারের সচরাচর দৃষ্ট রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এনাল ফিসার ২ প্রকার, যথা -

  1. একিউট এনাল ফিসার (Acute Anal Fissure) এবং 
  2. ক্রনিক এনাল ফিসার (Chronic Anal Fissure)।

“জেনে রাখা ভালো”

একিউট এবং ক্রনিক এনাল ফিসার কাকে বলে ?

প্রাথমিক অবস্থায় যে এনাল ফিসার হয় তাকে একিউট এনাল ফিসার বলে। সাধারনতঃ একিউট এনাল ফিসার কোন ঔষধ ছাড়াই ২/১ সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়। কিন্তু যদি ২ বা ততোধিক বার এবং একটানা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের অধিক স্থায়ী ফিসার থাকে তখন তাকে ক্রনিক এনাল ফিসার বলে।

কারন (Causation)

⮊. অন্যতম কারনঃ

     ⮞ মূলতঃ মলদ্বারের মিউকোসায় প্রবল টানপড়া এনাল ফিসারের অন্যতম কারন।

     ⮞ শক্ত, শুস্ক এবং মোটা মল।

      ⮞ অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্য।

     ⮞ অত্যধিক ডায়রিয়া।

      ⮞ মলদ্বার চুলকানো।

     ⮞ পায়ু মৌথুন অথবা মলদ্বারে ডিলডো ব্যবহার।

     ⮞ বৃহৎ সন্তান প্রসব।

     ⮞ ফরসেপ ডেলিভারী।

     ⮞ পাইলস এর ক্রটিপূর্ন অপারেশন।

     ⮞ কর্ন’স ডিজিজ (Crohan's disease)

     ⮞ আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis)

⮊. অন্যান্য কারনঃ

     ⮞ আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশী গ্রহন।

     ⮞ শাক-সব্জি কম খাওয়া।

     ⮞ সময় মত খাদ্য গ্রহন না করা।

     ⮞ পানি কম পান করা।

     ⮞ অত্যধিক কৃত্রিম খাদ্য গ্রহন করা।

     ⮞ বারবার মলবেগ চেপে রাখার অভ্যাস।

     ⮞ অত্যধিক এবং দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমন।

     ⮞ রাত্রী জাগরন এবং দিনে ঘুমানো।

     ⮞ দীর্ঘদিন বিভিন্ন ঔষধ যেমন বেদনানাশক, ল্যাক্সাটিভ, স্টেরয়েডস সেবন করা।

     ⮞ গর্ভাবস্থা অনেক সময় এ রোগ হতে সহায়তা করে।

কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)

     ⮡  মহিলারা অধিক আক্রান্ত হন। বিশেষতঃ

           বিবাহিত মহিলারা।

           সন্তানের মায়েরা।

           গর্ভবতীরা।

     ⮡  বৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা কদাচিৎ হন (পেশীর টানভাব কম থাকার কারনে)।

     ⮡   ট্রাক-বাসের ড্রাইভাররা অধিক আক্রান্ত হন (দীর্ঘক্ষন বসে থাকা এবং মলবেগ চেপে রাখার কারণে)।

ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinicla feature)

লক্ষন (Symptms). 

  ⮊. হঠাৎ সৃষ্টি হবে।

            ⮡  বিশেষতঃ মলাশয়ের মিউকোসায় টান পড়ার পর।

            ⮡  মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ভীষন ডায়রিয়ার পর।

  ⮊. মলদ্বারে তীব্র ব্যথা অনুভ‚ত হবে, বিশেষতঃ

            ⮡  মলত্যাগ করার পর।

            ⮡  একটানা দীর্ঘক্ষন ব্যথা থাকবে। আবার স্বল্পকাল স্থায়ী ব্যথাও হতে পারে।

            ⮡  ব্যথা কেটে ফেলা প্রকৃতির।

            ⮡  ব্যথার সাথে জ্বালাও থাকতে পারে।

  ⮊. মলদ্বারে অনেক সময় কাঁটা বিঁধে থাকার মতো ব্যথা ও অনুভূতি থাকে।

  ⮊. ব্যথা হঠাৎই থেমে যাবে।

  ⮊. পুনরায় মলত্যাগের পর ব্যথা আরম্ভ হবে।

  ⮊. রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে।

  ⮊. ব্যথার কারনে রোগী মলত্যাগ করতে ভয় পায়, ফলে মল আবদ্ধ হয়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য আরো বৃদ্ধি পায়।

  ⮊. মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরন হতে পারে তবে তা পরিমানে অত্যন্ত কম। রক্ত টাটকা, উজ্জল বর্নের। তবে তা মলের সাথে মিশ্রিত অথবা টয়লেট পেপার ব্যবহারের পর তাতে সামান্য পরিমানে পাওয়া যেতে পারে।

  ⮊. শৌচ করার সময় মলদ্বারে তৈলাক্তভাব থাকতে পারে।

  ⮊. মলদ্বারে সুড়সুড় করা অনুভুতি থাকতে পারে।

চিন্থ (Sign)

  ⮊. রোগীকে একদিকে কাত করে শুইয়ে মলদ্বার পরীক্ষা করলে ফিসার দেখতে পাওয়া যাবে।

⮡  প্রক্রিয়াটি খুব হালকাভাবে এবং ধীরে করতে হবে, যাতে চিকিৎসকের কারনে ফিসার আরো বেড়ে না যায়।

  ⮊. মলদ্বার শক্তভাবে বোঁজা পাওয়া যাবে।

  ⮊. সেন্টিনাল স্কিন ট্যাগ পাওয়া যেতে পারে।

ব্যাবস্থাপনা (Management)

☑. কোষ্ঠ পরিস্কার রাখার পরামর্শ দিতে হবে।

☑.  প্রচুর পানি এবং শাক-সব্জি খাবার পরামর্শ দিতে হবে।

☑.  আমিষজাতীয় খাবার অপেক্ষাকৃত কম খাবার পরামর্শ দিতে হবে।

☑.  নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতে হবে।

☑.  মলদ্বার এবং তার আশেপাশের অংশ পরিস্কার রাখতে হবে।

☑.  অবশ্যই ডিজিটাল এক্সামিনেশন করা যাবে না।

☑.  হিপ বাথ বা সিজ বাথ (Sitz bath) অনেক সময় রোগীকে দ্রুত উপশম দিতে সাহায্য করে। (সিজ বাথ দেখুন)

☑.  মলদ্বার বা তার আশেপাশের অংশে চাপ পড়ে এমন কাজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

☑.  মলত্যাগের পর (রোগীর উপশম অনুযায়ী) তাপ বা ঠান্ডা প্রয়োগ করা যেতে পারে।

☑.  মলদ্বার খুব শুকনো থাকলে ক্যালান্ডুলা Q ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

☑.  রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করতে হবে।

☑.  অবশ্যই লক্ষন সদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়

ডা. রাতুল মাহমুদ সজল

বিএইচএমএস

নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *