মলদ্বারের মিউকোসা লেয়ারে ফাটল বা চিড় (Crack) সৃষ্টি হলে তাকে এনাল ফিসার (Anal Fissure) বলে। এটি মলদ্বারের সচরাচর দৃষ্ট রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এনাল ফিসার ২ প্রকার, যথা -
- একিউট এনাল ফিসার (Acute Anal Fissure) এবং
- ক্রনিক এনাল ফিসার (Chronic Anal Fissure)।
“জেনে রাখা ভালো”
একিউট এবং ক্রনিক এনাল ফিসার কাকে বলে ?
প্রাথমিক অবস্থায় যে এনাল ফিসার হয় তাকে একিউট এনাল ফিসার বলে। সাধারনতঃ একিউট এনাল ফিসার কোন ঔষধ ছাড়াই ২/১ সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়। কিন্তু যদি ২ বা ততোধিক বার এবং একটানা ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের অধিক স্থায়ী ফিসার থাকে তখন তাকে ক্রনিক এনাল ফিসার বলে।
কারন (Causation)
⮊. অন্যতম কারনঃ
⮞ মূলতঃ মলদ্বারের মিউকোসায় প্রবল টানপড়া এনাল ফিসারের অন্যতম কারন।
⮞ শক্ত, শুস্ক এবং মোটা মল।
⮞ অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্য।
⮞ অত্যধিক ডায়রিয়া।
⮞ মলদ্বার চুলকানো।
⮞ পায়ু মৌথুন অথবা মলদ্বারে ডিলডো ব্যবহার।
⮞ বৃহৎ সন্তান প্রসব।
⮞ ফরসেপ ডেলিভারী।
⮞ পাইলস এর ক্রটিপূর্ন অপারেশন।
⮞ কর্ন’স ডিজিজ (Crohan's disease)
⮞ আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis)
⮊. অন্যান্য কারনঃ
⮞ আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশী গ্রহন।
⮞ শাক-সব্জি কম খাওয়া।
⮞ সময় মত খাদ্য গ্রহন না করা।
⮞ পানি কম পান করা।
⮞ অত্যধিক কৃত্রিম খাদ্য গ্রহন করা।
⮞ বারবার মলবেগ চেপে রাখার অভ্যাস।
⮞ অত্যধিক এবং দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমন।
⮞ রাত্রী জাগরন এবং দিনে ঘুমানো।
⮞ দীর্ঘদিন বিভিন্ন ঔষধ যেমন বেদনানাশক, ল্যাক্সাটিভ, স্টেরয়েডস সেবন করা।
⮞ গর্ভাবস্থা অনেক সময় এ রোগ হতে সহায়তা করে।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)
⮡ মহিলারা অধিক আক্রান্ত হন। বিশেষতঃ
বিবাহিত মহিলারা।
সন্তানের মায়েরা।
গর্ভবতীরা।
⮡ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা কদাচিৎ হন (পেশীর টানভাব কম থাকার কারনে)।
⮡ ট্রাক-বাসের ড্রাইভাররা অধিক আক্রান্ত হন (দীর্ঘক্ষন বসে থাকা এবং মলবেগ চেপে রাখার কারণে)।
ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinicla feature)
লক্ষন (Symptms).
⮊. হঠাৎ সৃষ্টি হবে।
⮡ বিশেষতঃ মলাশয়ের মিউকোসায় টান পড়ার পর।
⮡ মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ভীষন ডায়রিয়ার পর।
⮊. মলদ্বারে তীব্র ব্যথা অনুভ‚ত হবে, বিশেষতঃ
⮡ মলত্যাগ করার পর।
⮡ একটানা দীর্ঘক্ষন ব্যথা থাকবে। আবার স্বল্পকাল স্থায়ী ব্যথাও হতে পারে।
⮡ ব্যথা কেটে ফেলা প্রকৃতির।
⮡ ব্যথার সাথে জ্বালাও থাকতে পারে।
⮊. মলদ্বারে অনেক সময় কাঁটা বিঁধে থাকার মতো ব্যথা ও অনুভূতি থাকে।
⮊. ব্যথা হঠাৎই থেমে যাবে।
⮊. পুনরায় মলত্যাগের পর ব্যথা আরম্ভ হবে।
⮊. রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে।
⮊. ব্যথার কারনে রোগী মলত্যাগ করতে ভয় পায়, ফলে মল আবদ্ধ হয়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য আরো বৃদ্ধি পায়।
⮊. মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরন হতে পারে তবে তা পরিমানে অত্যন্ত কম। রক্ত টাটকা, উজ্জল বর্নের। তবে তা মলের সাথে মিশ্রিত অথবা টয়লেট পেপার ব্যবহারের পর তাতে সামান্য পরিমানে পাওয়া যেতে পারে।
⮊. শৌচ করার সময় মলদ্বারে তৈলাক্তভাব থাকতে পারে।
⮊. মলদ্বারে সুড়সুড় করা অনুভুতি থাকতে পারে।
চিন্থ (Sign)
⮊. রোগীকে একদিকে কাত করে শুইয়ে মলদ্বার পরীক্ষা করলে ফিসার দেখতে পাওয়া যাবে।
⮡ প্রক্রিয়াটি খুব হালকাভাবে এবং ধীরে করতে হবে, যাতে চিকিৎসকের কারনে ফিসার আরো বেড়ে না যায়।
⮊. মলদ্বার শক্তভাবে বোঁজা পাওয়া যাবে।
⮊. সেন্টিনাল স্কিন ট্যাগ পাওয়া যেতে পারে।
ব্যাবস্থাপনা (Management)
☑. কোষ্ঠ পরিস্কার রাখার পরামর্শ দিতে হবে।
☑. প্রচুর পানি এবং শাক-সব্জি খাবার পরামর্শ দিতে হবে।
☑. আমিষজাতীয় খাবার অপেক্ষাকৃত কম খাবার পরামর্শ দিতে হবে।
☑. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতে হবে।
☑. মলদ্বার এবং তার আশেপাশের অংশ পরিস্কার রাখতে হবে।
☑. অবশ্যই ডিজিটাল এক্সামিনেশন করা যাবে না।
☑. হিপ বাথ বা সিজ বাথ (Sitz bath) অনেক সময় রোগীকে দ্রুত উপশম দিতে সাহায্য করে। (সিজ বাথ দেখুন)
☑. মলদ্বার বা তার আশেপাশের অংশে চাপ পড়ে এমন কাজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
☑. মলত্যাগের পর (রোগীর উপশম অনুযায়ী) তাপ বা ঠান্ডা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
☑. মলদ্বার খুব শুকনো থাকলে ক্যালান্ডুলা Q ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
☑. রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করতে হবে।
☑. অবশ্যই লক্ষন সদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
বিএইচএমএস
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।