এ্যাপোপ্লেক্সি একটি প্রাচীন ধারনার মেডিকেল টার্ম, বর্তমান সময়ে এ্যাপোপ্লেক্সি শব্দটি প্রায় ব্যবহার হয় না বললেই চলে, কারন এটি এমন একটি স্নায়ুতন্ত্রের অথবা অথবা রক্ত জমাট বাঁধার মতো অবস্থা যেখানে রোগী হঠাৎ আক্রান্ত হয়, অজ্ঞান অবস্থাপ্রাপ্ত হয় এবং স্ট্রোক (Stroke) এর মতো ঘটনার সৃষ্টি হয়।
পিটুইটারী অথবা এ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে হঠাৎ রক্তক্ষরনজনিত কারনে বা মস্তিস্কের রক্তনালীতে হঠাৎ রক্তের জমাট বাঁধা অংশ আবদ্ধ হয়ে গেলে এ্যাপোপ্লেক্সি বা সন্ন্যাস রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এ্যাপোপ্লেক্সি Diagnosis করা অনেকসময় কঠিন হয়ে পড়ে এই কারনে যে অনেক রোগেই এ্যাপোপ্লেক্সির মতো লক্ষন প্রকাশ পেয়ে থাকে, যেমন এ্যওর্টা অথবা মস্তিস্কে সৃষ্টি হওয়া এ্যানিউরিজম হঠাৎ বিদির্ন হওয়া (Ruptured aortic or cerebral aneurysm), হার্ট এ্যটাক (Heart attack), কার্ডিয়াক ডেথ (Sudden cardiac death) ইত্যাদি।
পিটুইটারী এ্যাপোপ্লেক্সি (Pitutary Apoplexy)
পিটুইটারী গ্রন্থির অভ্যান্তরে রক্তক্ষরন হলে তাকে পিটুইটারী এ্যাপোপ্লেক্সি বলে। এটি একটি Medical emergency, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পিটুইটারী এ্যাডিনোমা, পিটুইটারী এ্যাপোপ্লেক্সির অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে একটি।
এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ (Hypertension), মস্তিস্কে আঘাত (Head trauma), প্রস্টেটগ্রন্থির ক্যান্সারে ব্যবহৃত এহজঐ হরমোন, রক্তস্রাবরোধী ঔষধ (Anti-Coagulant drugs), কর্টিকোটপিক হরমোনের ঘাটতি, থাইরোট্রপিক হরমোনের ঘাটতি ইত্যাদিও পিটুইটারী এ্যাপোপ্লেক্সি হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং এদের প্রতিটি ক্ষেত্রই মারাত্মক বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ন।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
- হঠাৎ তীব্রভাবে রোগলক্ষনের সূত্রপাত হবে।
- হঠাৎ তীব্রভাবে বজ্রপাতের মতো মাথাব্যথা হবে।
- প্রচন্ড বমিভাব এবং বমি হবে।
- রোগী অজ্ঞান হয়ে যাবে।
- খিঁচুনী হতে পারে।
- ৫০% ক্ষেত্রে III, IV এবং VI ক্রেনিয়াল নার্ভের কার্যকারীতা নষ্ট অথবা হ্রাসপ্রাপ্ত হবে।
- পক্ষাঘাতিক অবস্থার সৃষ্টি হবে।
- দৃষ্টিহীনতা অথবা দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক গোলযোগ, আলোকাতঙ্ক (Photophobia) ইত্যাদি দেখা দেবে।
- সমস্ত মুখমন্ডল ফুলে যাবে, মুখমন্ডলে ব্যথা হতে পারে।
- ঘ্রানশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- নাক থেকে রক্তপাত অথবা প্রচুর পাতলা সর্দিস্রাব হতে পারে।
- রক্তচাপ কমে যাবে।
- রক্তের শর্করার মাপ কমে যেতে পারে।
- রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে (Hyperkalemia)।
- রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে (Hyponatremia)।
- দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ্যড্রিনাল এ্যাপোপ্লেক্সি (Adrenal Apoplexy)
আমরা জানি, দুই কিডনীর উপরে দুইটি এড্রিনাল গ্রন্থি অবস্থান করে। এই গ্রন্থি দু’টো শরীরের জন্য আবশ্যকীয় কিছু গুরুত্বপূর্ন হরমোন নিঃসরন করে, এই এ্যড্রিনাল গ্রন্থিতে রক্তক্ষরন হলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে এ্যড্রিনাল এ্যাপোপ্লেক্সি বলে।
মনে রাখতে হবে, পিটুইটারী গ্ল্যান্ড এ্যাড্রিনো কর্টিকোট্রপিক হরমোন (ACTH) নিঃসরন করে, যা অনেকগুলো হরমোনের মধ্যে অন্যমত একটি হরমোন এবং কোন কারনে পিটুইটারী গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্থ হলে তথা এই হরেেমানের নিঃসরন ব্যহত হলে কর্টিসল (Cortisol) নামক হরমোনের নিঃসরনও বাধাগ্রস্থ হয় যা এ্যাডিসন’স ক্রাইসিস (Addison's crisis) বা এ্যাড্রিনাল ইনসাফিসিয়েন্সি (Adrenal insufficiency) নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
- প্রচন্ড পেটব্যথা হবে।
- বমি এবং বমিভাব হবে।
- পাতলা পায়খানা হবে।
- রোগী জ্ঞান হারাবে।
- খিঁচুনী হতে পারে।
- রক্তচাপ মারাত্মক রকম হ্রাস পাবে এবং রোগী প্রচন্ড দূর্বলবোধ করবে।
- রক্তের শর্করা মারাত্মক হ্রাস পাবে।
- দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ব্যবস্থাপনা (Management)
লক্ষন সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
রোগীর রক্তচাপ, রক্ত শর্করা (Blood sugar), রক্তের সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিতে হবে।
প্যাথলজীক্যাল ইনভেষ্টিগেশান (Pathological investigations)
- M.R.I.
- C.T Scan.
- Serum Electrolytes.
- Blood glucose.
- ACTH
- Cortisol.
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়,
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।