অধিক মাত্রায় আসের্নিক সেবন, পানে বা শ্বাসপথে গ্রহনের ফলে যে বিষাক্ততা সৃষ্টি হয় তাকে আর্সেনিক পয়জনিং (Arsenic poisoning) বা আর্সেনিকোসিস (Arsenicosis) বলা হয়।
মানবদেহের জন্য আর্সেনিক মারাত্মক ক্ষতিকর। সাদা, সোনালী এবং হলুদাভ বর্নের এই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদানটি স্বাদহীন বলে মানুষ অজান্তেই এর দ্বারা বিষাক্ত হয়।
সচরাচর বৃহৎ কল-কারখানার আশেপাশের এলাকায় এবং রাসায়নিক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে অধিক আর্সেনিক পয়জনিং হতে দেখা যায়,তবে মাটির আর্সেনিক আধিক্যের কারনে এবং টিউবয়েলের পানিতে আর্সেনিকের পরিমান অধিক হওয়ার কারনে মানুষের আর্সেনিকোসিসের ঘটনাও ঘটে থাকে।
কারন (Causation)
- মাটির আর্সেনিক মিশ্রিত জলপান অন্যতম কারন।
- আর্সেনিক মিশ্রিত ধোঁয়ায় শ্বাস গ্রহন।
- আর্সেনিক নির্গত হয় এমন খনিতে শ্রম দেয়া অথবা তার আশেপাশে বসবাস করা।
- প্রচুর ধোঁয়া এবং রাসায়নিক বর্জ্য নির্গত হয় এমন কলকারখানায় কাজ করা অথবা তার আশেপাশের এলাকায় বসবাস করা।
- প্রচুর পরিমানে আর্সেনিক সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহন করা (সাধারনতঃ খাবারে আর্সেনিক মিশ্রিত থাকে না, তবে বিশেষ কিছু সামদ্রিক খাবারে খুব নূন্যতম পরিমানে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়)।
- বিভিন্ন পেশার সাথে যারা নিবিড়ভাবে জড়িত, যেমন চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, চিত্রশিল্পী, কীটনাশক বা বিষ নিয়ে নাড়াচাড়া করা শ্রমিক, গবেষক ইত্যাদি।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical Features)
লক্ষন (Symptoms)
- (প্রাথমিক অবস্থায়)
- মুখে ধাতব আস্বাদ।
- শ্বাসে রশুনের মতো গন্ধ।
- ঢোক গিলতে কষ্ট।
- অত্যাধিক পিপাসা।
- মুখ থেকে লালাক্ষরন।
- তীব্র বমিভাব এবং বমি।
- পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা।
- মল কালচেবর্নের বা রক্তমিশ্রিত।
- ত্বকের লালভাব।
- ত্বকে আঁচিলের মতো উদ্ভেদ।
- হাত-পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগ সুড়সুড় করা।
- (পরবর্তী সময়ে)
- গন্ধহীন, বর্নহীন, চালধোয়া জলের মতো পাতলা পায়খানা।
- মাংসপেশীর আক্ষেপ এবং টান ধরা।
- দ্রুত হৃদস্পন্দন।
- তীব্র বমি এবং বমিভাব।
⮡ . বমি কালচে বা হলুদ বর্নের।
⮡ . প্রচুর শ্লেষ্মামিশ্রিত। কখনো কখনো রক্তমিশ্রিত।
⮡ . বমি হড়হড় করে ছিটকে বের হবে।
- বারবার ডায়রিয়া এবং পেটব্যথার আক্রমন হবে।
⮡ . মলত্যাগে প্রচুর কুন্থন থাকবে।
⮡ . মলদ্বারে জ্বালা হবে।
- ঘনঘন মাথাব্যথা এবং মাথাঘোরা হবে।
- মাংসপেশীতে ব্যথা এবং খিলধরা থাকবে।
- দীর্ঘদিন আর্সেনিকোসিস-এ ভুগলে,
- ত্বক কালো এবং পুড়ে যাওয়ার মতো হবে।
- পেটের গোলযোগ মারাত্মক আকার ধারন করবে।
- চোখের চারিদিকে জল জমবে।
- যকৃত (Liver) এর মারাত্মক ক্ষতি হবে।
- কিডনী অকার্যকর হয়ে যাবে এবং
⮡ . মূত্রাল্পতা দেখা দেবে।
⮡ . প্রস্রাবে এ্যলবুমিন নির্গত হবে।
⮡ . রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব হতে পারে।
- আর্সেনিক বিষাক্ততার সাথে পেটের গোলযোগ, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি অনেক লক্ষনে কলেরার মিল আছে, তবে পার্থক্যগুলো মনে রাখতে হবে,
আর্সেনিক পয়জনিং | কলেরা |
গলা ও পেটে তীব্র জ্বালা থাকে। | থাকে না। |
ভয়ানক বমি থাকে; বমিতে পিত্ত, শ্লেষ্মা এবং রক্ত থাকে। | পানির মতো বমি (চাল ধোয়া পানির মতো মল), বমিতে পিত্ত, শ্লেষ্মা বা রক্ত থাকে না। |
বমির পূর্বে গলাব্যথা হবে। | বমির পরে গলাব্যথা হবে। |
প্রথমে বমি পরে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। | প্রথমে পাতলা পায়খানা পরে বমি শুরু হয়। |
প্রবল কোঁৎ এবং মলদ্বারে তীব্র জ্বালা থাকে। | কোন প্রকার কোঁৎ বা জ্বালা থাকেনা। |
হিমাঙ্গ অবস্থায় কন্ঠস্বর ভাঙ্গা এবং খসখসে হয়ে যায়। | প্রথম অবস্থা থেকেই কন্ঠস্বর খসখসে থাকে। |
কনজাংটিভায় প্রদাহ থাকতে পারে। | থাকেনা। |
কেমিক্যাল পরীক্ষায় আর্সেনিক বিষাক্ততা পাওয়া যায়। | মলের কালচার পরীক্ষায় ভিব্রিও কলেরার জীবানু পাওয়া যায়। |
⮡ . সর্বক্ষন গলাব্যথা করতে থাকে, গলায় এবং পেটে ভয়ানক জ্বালাকর অনুভ‚তি থাকে।
⮡ . কিডনী, যকৃত এবং হৃদরোগ হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, স্নায়ু সংক্রান্ত গোলযোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে আর্সেনিক বিষাক্ততা, গর্ভস্থ শিশুর জন্য মারাত্মক বিপদ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
চিন্থ (Signs)
- সমস্ত শরীরে এবং হাতেপায়ে দানাযুক্ত উদ্ভেদ।
- উদ্ভেদ এবং ত্বকগুলো খসখসে ও রুক্ষ।
ব্যবস্থাপনা (Management)
- লক্ষনসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
- আর্সেনিক মুক্ত খাদ্যগ্রহন ও জলপান করতে হবে।
- পেশাগত দায়িত্বে আর্সেনিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়,
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।