একে Birth asphayxia - ও বলা হয়। Asphyxia অর্থ “শ্বাসরোধ” এবং Neonate অর্থ “নবজাতক।” সুতরাং এ্যাসফেক্সিয়া নিওনেটোরাম বা বার্থ এ্যাসফেক্সিয়া বলতে “নবজাতকের শ্বাসরোধ” বা নবজাতকের অক্সিজেনের অভাবজনিত অবস্থাকে বোঝায়।
সুস্থ, স্বাভাবিক শিশু, ভুমিষ্ট হওয়ার ৬ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস শুরু করে, অনেকক্ষেত্রে এটি ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত-ও হতে পারে, কিন্তু শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরবর্তী ৯০ সেকেন্ডের পরেও, নিজে থেকে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে শ্বাসগ্রহনে ও ত্যাগে ব্যর্থ হলে তাকে এ্যাসফেক্সিয়া নিওনেটোরাম বা বার্থ এ্যাসফেক্সিয়া বলা হয়।
বার্থ এ্যাসফেক্সিয়া একটি মারাত্মক এবং প্রান শংসয়ী অবস্থা, বার্থ এ্যাসফেক্সিয়ার কারনে নবজাতকের মস্তিস্কে অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ার কারণে শিশুর মস্তিস্ক এবং স্নায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়া ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অঙ্গের ভয়ানক ক্ষতিসাধন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা হতে পারে। শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এ্যাসফেক্সিয়া নিওনেটোরাম অন্যতম।
কারা অধিক আক্রান্ত হয় (More Prone To)
ভূমিষ্ট হওয়ার ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে যে কোন নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে।
গবেষনায় দেখা গেছে, দেশের মোট ভুমিষ্ট হওয়া শিশুর ৫ থেকে ১০ শতাংশ নবজাতক এ্যাসফেক্সিয়া নিওনেটোরামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ অথবা অন্যান্য জটিলতার শিকার হয়।
কারন (Causation)
১। গর্ভবতী সমস্যাজনিতঃ
- গর্ভবতী মায়ের এ্যাসফেক্সিয়া।
- কোরিওএ্যামনিওনাইটিস (Chorioamnionitis)।
- মারাত্মক রক্তস্বল্পতা।
- ডায়াবেটিস মেলিটাস।
- গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ।
- প্রি-এক্লাম্পশিয়া।
- বিভিন্ন ঔষধ গ্রহন।
- মরফিন (Morphine)।
- পেথিডিন (Pethidine)।
- ক্লোরোফর্ম (Chloroform) ইত্যাদি।
- বিভিন্ন জীবানুর সংক্রামন।
২। গর্ভবতীর জরায়ুর সমস্যাজনিতঃ
- জরায়ুর মধ্যে অবস্থানকালে এ্যাসফেক্সিয়ার বিদ্যমানতা।
- শিশুর অস্বাভাবিক অবস্থান।
- দীর্ঘমেয়াদী প্রসব।
৩। গর্ভফুল সংক্রান্ত কারণঃ
- প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta previa)।
- এ্যব্রাপশিও প্ল্যাসেন্টা (Abruptio placenta)।
- প্ল্যাসেন্টিয়াল ইনসাফিয়েন্সী (Placental insufficiency)।
- আম্বেলিকাল কর্ডের স্থানচ্যুতি বা নির্গমন।
৪। গর্ভস্থ শিশুর নিজস্ব সমস্যাজনিতঃ
- গর্ভস্ত শিশুর মস্তিস্কের অভ্যান্তরে চাপ বৃদ্ধি পাওয়া (Cephalopelvic disproportion)। এবং সেই কারনে মস্তিস্কের অভ্যান্তরস্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের মূল কেন্দ্রে রক্ত ঠিকমতো সরবরাহ না হওয়া।
- ব্রীচ ডেলিভারী (Breech delivery) অথবা ফরসেপস্ ডেলিভারী (Forceps delivery) এর কারনে মাথায় আঘাত পাওয়া।
প্রকারভেদ (Classification)
এ্যাসফেক্সিয়া নিওনেটোরাম দুই প্রকার যথা,
১. এ্যাসফেক্সিয়া লিভিডা (Asphyxia Livida বা Blue Asphyxia) এবং
২. এ্যাসফেক্সিয়া পেলিডা (Asphyxia Pallida বা Pale/White Asphyxia)।
এ্যাসফেক্সিয়া লিভিডা (Asphyxia Livida)
এতে নবজাতকের ঠোঁট গভীর নীলবর্ন হয়। ত্বক কিছুটা নীলাভ বর্ন ধারন করে। চোখ আধখোলা এবং হাত-পায়ের মাংশ-পেশী কিছুটা শক্ত মনে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নবজাতকের বুকে হাত দিলে হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত পাওয়া যায়, কখনো কখনো হৃদস্পন্দন খুব দূর্বলও মনে হতে পারে। আপগার স্কোর (Apgar Score) ৫ বা ৫ এর উপরে থাকে।
এ্যাসফেক্সিয়া পেলিডা (Asphyxia Pallida)
এতে নবজাতকের ত্বক রক্তশূন্য এবং ফ্যাকাশে দেখায়। হাত-পাগুলি খুবই নরম, ন্যাতানো এবং অসাড় দেখায়। চোখ বিস্ফোরিত এবং হৃদস্পন্দন খুবই মৃদ্যু হয়, এত মৃদ্যু হয় যে, অনেকসময় স্টেথোস্কোপ (Stethoscope) দিয়েও তা ভালোভাবে শুনতে পাওয়া যায় না। আপগার স্কোর (Apgar Score) ৫ এর নীচে থাকে।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical Features)
লক্ষন (Symptoms)
- নবজাতক ভূমিষ্ট হওয়ার পর কাঁদবে না অথবা দেরীতে কাঁদবে।
- অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে নবজাতকের ত্বক, ঠোঁট, আঙ্গুলের অগ্রভাগ নীলাভবর্ন ধারণ করবে যাকে Cyanosis বলা হয়।
- নবজাতকের হৃৎপিন্ডের গতি স্বাভাবিক অপেক্ষা দ্রুত অথবা কম হবে।
- বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দেবে না অথবা খুব কম সাড়া দেবে।
- নবজাতকের পেশীর টানভাব কম পাওয়া যাবে।
- মেটাবলিক এসিডোসিস দেখা দেবে।
- আপগার স্কোর (Apgar Score) ৫ এর নীচে পাওয়া যেতে পারে।
চিন্থ (Signs)
- নবজাতক ভূমিষ্ট হওয়ার পর কাঁদবে না অথবা দেরীতে কাঁদবে।
- নবজাতকের Cyanosis থাকবে।
- নবজাতককে নিস্তেজ এবং ন্যাতানো পাওয়া যাবে।
- নবজাতকের পেশী টান এবং Moro reflex পাওয়া যাবে না বা খুবই কম পাওয়া যাবে।
জটিলতা (Complications)
- Post asphyxia sndrome.
- খিঁচুনী (Seizure)।
ব্যবস্থাপনা (Management)
- ভূমিষ্ট হবার পরেপরেই নবজাতকের নাক এবং মুখগহ্বর জীবানুমুক্ত গজ দিয়ে পরিস্কার করে ফেলতে হবে এবং প্রয়োজনে মিউকাস ক্যাথিটার (Mucous catheter) দ্বারা পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
- উপর দিকে পা এবং নীচের দিকে মাথা করে শিশুর পিঠে মৃদ্যুভাবে আঘাত করতে হবে।
- শিশুকে যথাসম্ভব দ্রুত অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকসময় শিশুর মুখে মুখ দিয়ে ফুঁ (Mouth to mouth breathing) দিলে শিশু শ্বাস নেয়।
- শিশুকে গরম আচ্ছাদনে আবৃত করতে হবে।
- প্রয়োজনে শিশুকে ইনকিউবেটর (Incubator)-এ রেখে বারবার পর্যবেক্ষন করতে হবে।
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়,
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।