জরায়ু মুখ এর অপর নাম সার্ভিক্স (Cervix), এবং এন্ডো (Endo) শব্দের অর্থ আভ্যান্তরীন, অর্থাৎ জরায়ু মুখের অভ্যান্তরভাগে যে এপিথেলিয়াম মেমব্রেন এর আস্তরন থাকে, তার প্রদাহকে এন্ডোসার্ভিসাইটিস (Endocervicitis) বলে।
এটি স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের সাধারন রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এন্ডোসার্ভিসাইটিস- এ কেবল যে জরায়ু মুখের আবরনই ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা নয়, এটি জরায়ুর গ্রীবা (neck of the uterus) সহ আশেপাশের অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কারন (Causation)
এন্ডোসার্ভিসাইটিস সাধারনতঃ বিভিন্ন ধরনের জীবানু সংক্রামন, বিশেষতঃ গনোকক্কাস, ক্ল্যামাইডিয়া, এইচআইভি, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি, মেট্রাইটিস (Metritis), এন্ডোমেট্রাইটিস (Endometritis), সালফিংজাইটিস, সহবাস পরবর্তী সংক্রামন, জরায়ু মধ্যস্থ জন্মবিরতীকরন পদ্ধতি (Intra uterine contraceptive device বা IUCD) ব্যবহার, ইত্যাদি কারনে হয়ে থাকে।
আবার শুক্রানু ধ্বংসকারী বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, কনডমে থাকা লুব্রিক্যান্ট থেকেও এন্ডোসার্ভিসাইটিস হতে পারে। আরো দেখুন সার্ভিসাইটিস (Cervicitis)।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)
- যে কেউ যে কোন বয়সে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা অধিক আক্রান্ত হন।
- মেনোপজের পর হবার ঝুঁকি বেশী থাকে (এন্ড্রোমেট্রিয়াম ক্ষীন হয়ে যাওয়ার কারনে)।
- যে সকল নারী একাধিক যৌনসঙ্গির সাথে মিলিত হন, তারা অধিক আক্রান্ত হন।
ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
- অনেক সময় লক্ষনবিহীন।
- খুব ধীরেধীরে রোগের সূত্রপাত হবে।
- ঋতুস্রাব ছাড়াও মাঝে মাঝে যোনীপথ থেকে রক্তক্ষরন হবে।
- যোনীপথ থেকে ধূসর, বাদামীবর্নের স্রাব নির্গত হবে।
- তলপেটে ব্যথা এবং অস্বস্তিবোধ হবে।
- প্রায়শঃ যোনীপথে ব্যথা হবে এবং সহবাসে প্রচন্ড কষ্ট হবে।
চিন্থ (Signs)
- রোগী দিনদিন দূর্বল ও ক্ষীন হতে থাকবে।
- পরীক্ষাকালীন রোগীকে দূর্বল ও অসুস্থ দেখাবে।
- তলপেটে চাপ দিলে রোগী মৃদ্যু থেকে মাঝারীধরনের ব্যথার কথা বলবে।
- যোনীপথ পরীক্ষা করলে,
- রক্তের ছিঁটে দেখা যেতে পারে।
- জরায়ু মুখ অস্বাস্থ্যকর দেখাবে।
ব্যবস্থাপনা (Management)
- রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।
- অবশ্যই লক্ষনসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
- যোনীপথ যথাসম্ভব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তবে পরিস্কারের উদ্দেশ্যে কোন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যেন ব্যবহার করা না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
প্যাথলজীক্যাল ইনভেষ্টিগেশান (Pathological investigations)
VDRL (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের)।
শেষ বিবেচনায়
এন্ডোসার্ভিসাইটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ নারী স্বাস্থ্য সমস্যা যা জরায়ুমুখ এবং আশেপাশের অঞ্চলের প্রদাহ নির্দেশ করে। এই সমস্যার সমাধান ও প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন:
প্রথমত, এন্ডোসার্ভিসাইটিসের প্রাথমিক কারণগুলি যেমন জীবাণু সংক্রমণ, IUCD ব্যবহার, রাসায়নিক দ্রব্যাদির ব্যবহার ইত্যাদি সনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা উচিত। নিরাপদ যৌনাচার এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা অবলম্বন করলে অনেকাংশে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, রোগটির যথাযথ চিকিত্সা নিশ্চিত করতে হবে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে যদি প্রয়োজন হয়, আনুষঙ্গিক চিকিত্সা গ্রহণ করা উচিত। সর্বোপরি, নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং যৌন শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এই ধরনের সমস্যাগুলি আলোচনা করা এবং সহজলভ্য করার মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা সম্ভব।
সর্বোপরি, জরায়ু ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি যথাযথভাবে সমাধান করতে হলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও বেশি গবেষণা, বিনিয়োগ এবং সচেতনতা প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীরোগ নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুনঃ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। সুতরাং এন্ডোসার্ভিসাইটিস বা যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়,
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
One thought on “এন্ডোসার্ভিসাইটিস (Endocervicitis)”