নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয় (ডাঃ নওয়াব আলী প্রফেসরের বাসা), ৩৬৬, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
+৮৮০-১৭২০-৬৬৭১১৭
এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis)

জরায়ুর আভ্যান্তরীণ অংশ অর্থাৎ ইউটেরাইন মিউকোসা ছাড়াও ইউট্রাসের বাইরে এন্ডোমেট্রিয়াম (Endometrium) -এর বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিস্তার লাভ করাকে এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) বলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় ১৯০ লক্ষ নারী এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত এবং এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।

এ কারণে বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের মতানুযায়ী, খুব সাধারণ এবং ছোটখাটো লক্ষনকেও অবহেলা করা উচিত নয়, আর ঋতুস্রাবকালে তলপেটে তীব্র ব্যথা হলে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

প্রকারভেদ (Classification)

অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এন্ডোমেট্রিওসিসকে প্রধান দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা

  1. এন্ডোমেট্রিওসিস ইন্টার্না বা ইন্টার্নাল এন্ডোমেট্রিওসিস বা এ্যাডিনোমায়োসিস (Endometriosis interna বা Internal endometriosis বা Adenomyosis): যখন এটি জরায়ুর পেশী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে তখন তাকে Endometriosis interna বলা হয়।
  2. এন্ডোমেট্রিওসিস এক্সটার্না বা এক্সটার্নাল এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis externa বা External endometriosis): যখন এটি জরায়ু পেশীর বাইরে, যেমন পাউচ অফ ডগলাস, ওভারী, ইনটেস্টাইন ইত্যাদিতে বিস্তার লাভ করে তখন তাকে Endometriosis externa বলে।

কদাচিত হলেও এন্ডোমেট্রিওসিস ফুসফুস, প্লুরা, নাক ইত্যাদিতে বিস্তার লাভ করতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিস সচরাচর যে সকল স্থানে বিস্তার লাভ করে সেগুলো হলো,

  1. ওভারী (প্রায় সবক্ষেত্রে একসাথে দুইদিকেই)।
  2. পাউচ অফ ডগলাস (Pouch of douglas)।
  3. রেক্টো-ভেসিকেল পাউচ (Rectovesical pouch)।
  4. রাউন্ড লিগামেন্ট (Round ligament)।
  5. ইউটেরো-স্যাক্রাল লিগামেন্ট (Uterosacral ligament)।
  6. রেক্টো-ভ্যাজাইনাল সেপ্টাম (Rectovaginal septum)।
  7. আউটার কোট অফ ইউট্রাস (Outer coating of uterus)।
  8. পেটের বিভিন্ন কর্তিত স্থান যেমন,
    1. সিজারিয়ান সেকশানের স্কার (Scar of the cesarean section),
    2. এ্যাবডোমিনাল হিসট্রেকটমীর স্কার (Scar of the abdomenal hystrectomy),
    3. টিউবেকটমীর স্কার (Tubectomy scar),
    4. মায়োমেক্টমীর স্কার (Scar of the myomectomy),
    5. ইপিসিওটমীর স্কার (Episiotomy scar) ইত্যাদিতে।
  9. নাভী।
  10. জননাঙ্গ, যথা ভালভা, ভ্যাজাইনা ইত্যাদিতে।
  11. ডিম্বনালী (Fallopian tubes)।
  12. জরায়ুর মধ্যবর্তী পেশী তথা মায়োমেট্রিয়ামে।

এন্ডোমেট্রিওসিস কদাচিত যে সকল স্থানে বিস্তার লাভ করে সেগুলো হলো,

  • ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদ্রান্ত্র (Small and large intestine)।
  • মূত্রতন্ত্রের মূত্রথলী (Urinary Bladder), মূত্রবাহী নালী (Ureter) ইত্যাদি অংশে। এবং কদাচিৎ,
  • ফুসফুসের প্লরা (Pleura)।
  • ডায়াফ্রাম (Diaphragm)।
  • বাহু এবং উরুর গভীর পেশী, ইত্যাদিতে।

কারন (Causation)

  • প্রকৃত কারণ অজানা।
  • ইস্ট্রোজেন (Estrogen) হরমনের আধিক্য।
  • ঋতুস্রাবের পশ্চাৎগতি (Retrograde menstruation)।

কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)

  • নিঃসন্তানরা অধিক আক্রান্ত হন।
  • যাদের ঋতুস্রাব অল্প বয়সে শুরু হয়েছে, তারা অধিক আক্রান্ত হন।
  • যারা অপেক্ষাকৃত পাতলা তারা অধিক আক্রান্ত হন।
  • যাদের ঋতুস্রাব প্রতি ২৭ দিনে অথবা তার পূর্বে হয়।
  • যাদের মা-বোন-খালা এ রোগে আক্রান্ত আছেন বা ছিলেন, তাদের হবার সম্ভাবনা অধিক থাকে।

ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features)

লক্ষন (Symptoms

  • খুব ধীরে ধীরে রোগের সূত্রপাত হবে।
  • প্রথম দিকে তলপেটে ব্যথা, ভারবোধ, ঋতুস্রাবকালীন ব্যথা (Dysmenorrhea), অতি অম্লত্ব (Hyper acidity) ইত্যাদি লক্ষন দেখা দেবে।
  • ক্রমে তলপেটের ব্যথা ও ভারবোধ বৃদ্ধি পাবে।
  • প্রায় তলপেটে মৃদ্যু থেকে মাঝারী ধরনের ব্যথা হবে।
  • ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা হবে।
  • সহবাসের সময় কষ্ট হবে।
  • মল-মূত্র ত্যাগের সময় কষ্ট হবে।
  • ঋতুস্রাবের সময় অত্যাধিক রক্তক্ষরন হবে।
  • বন্ধ্যাত্ব দেখা দেবে (বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস অন্যতম)।
  • রোগী অল্পেই ক্লান্তিবোধ করবে।
  • ঋতুস্রাবের সময় পেটের গোলযোগ, পেটে ফাঁপ, কোষ্ঠকাঠিন্য বা উদরাময়, বমিভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

চিন্থ (Signs)

  • তলপেটে অপারেশনের চিন্থ পাওয়া যেতে পারে।
  • রোগীকে রক্তশূন্য, দূর্বল ও ফ্যাকাশে দেখাবে।
  • তলপেটে চাপ দিলে ব্যথার কথা বলবে। 
  • তলপেটে আড়ষ্টতা পাওয়া যাবে।
  • যোনীপথ পরীক্ষা করলে,
    • ↳. জরায়ু মুখ অস্বাস্থ্যকর ও শক্ত পাওয়া যাবে।

প্যাথলজীক্যাল ইনভেষ্টিগেশান (Pathological investigations)

  • CBC with ESR (WBC ↑., ESR ↑.).
  • USG Lower abdomen.

ব্যবস্থাপনা (Management

  • রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।
  • যথা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানিপান এবং শাক-সব্জি আহারের পরামর্শ দিতে হবে।
  • লক্ষন সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতে হবে।

মর্মকথা

এন্ডোমেট্রিওসিস হল একটি গুরুত্বপূর্ণ নারী স্বাস্থ্য সমস্যা যা জরায়ুর বাইরে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষের অসঙ্গত বৃদ্ধি ও বিস্তারের কারণে দেখা যায়। এটি প্রজনন বয়সী অনেক নারীকে প্রভাবিত করে এবং মহিলাদের জীবনমানকে বিপর্যস্ত করতে পারে। ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা, ব্যথা, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি এর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে পড়ে। অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এটিকে ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল এন্ডোমেট্রিওসিসে ভাগ করা হয়। সমস্যাটি শনাক্ত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইমেজিং টেস্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও এর প্রকৃত কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, লক্ষণানুযায়ী ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে এ রোগের ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে।

অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার স্ত্রীরোগ নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুনঃ

এন্ডোমেট্রাইটিস (Endometritis)

এন্ডোসার্ভিসাইটিস (Endocervicitis)

আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়,

ডা. রাতুল মাহমুদ সজল

বি.এইচ.এম.এস.

নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

About Author

2 thoughts on “এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *