ক্লিপ্টোম্যানিয়া (Kleptomania) একধরনের মানসিক অসুস্থতা, যে ক্ষেত্রে রোগী, বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না, তা যত তুচ্ছ এবং অপ্রয়োজনীয়-ই হোক না কেন। অধিকাংশ ক্লিপ্টোম্যানিয়া-য় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন জনবহুল স্থান, বাজার, শপিংমল. বিভিন্ন দোকান, ইত্যাদিতে ছোটখাটো জিনিস চুরি করে থাকে।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)
- যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে তবে, নারীরা অধিক আক্রান্ত হন।
- যারা ধনী এবং বিলাসী জীবনযাপন করে তারা অধিক আক্রান্ত হয়।
ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
- রোগী সাধারনতঃ পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই চুরি করে।
- কারো সহযোগীতা ছাড়াই ছুরি করে।
- চুরি করার প্রবল ইচ্ছা যা সে কোন ভাবেই দমন করতে পারে না।
- চুরি করার পর খুব আনন্দ অনুভব করে।
- কিন্তু পরে ভীষন অনুতপ্তবোধ করে।
- যদিও আবার ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়।
চিন্থ (Signs)
- সাধারণত উল্ল্যেখযোগ্য কোন চিন্থ থাকে না।
- উদ্ধত প্রকৃতির হয়।
- মিথ্যা বলার প্রবনতা থাকে।
জটিলতা (Complications)
- সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া।
- তীব্র অপরাধবোধ এবং অনুশোচনায় ভোগা।
ব্যবস্থাপনা (Management)
রোগীর সহযোগীতা ছাড়া ক্লিপ্টোম্যানিয়া আরোগ্য করা দুঃসাধ্য, এবং অধিকাংশ ক্লিপ্টোম্যানিয়া আক্রান্ত রোগীরা তাদের এই খারাপ অভ্যাস চিকিৎসকের কাছে গোপন করেন। এ কারনে, যে রোগী এই মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় একমাত্র তাকেই চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য করা সম্ভব, নচেৎ নয়।
- রোগীকে তার প্রকৃত অবস্থা বুঝিয়ে বলতে হবে, তার সামাজিক অবস্থান এবং পারিবারিক মর্যাদার বিষয়ে তাকে সম্যক ধারনা দিতে হবে।
- রোগীকে কোন প্রকার ভৎসনা করা যাবে না বরং কৌশলের মাধ্যমে এই মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
- প্রয়োজনে বাইরে গমনাগমনের সময় সার্বক্ষনিক একজন সঙ্গির ব্যবস্থা করতে হবে।
- ধর্মীয় অনুশাষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শেষকথা
ক্লিপ্টোম্যানিয়া একটি মারাত্মক মানসিক সমস্যা যা রোগীর জীবনকে গভীরভাবে বিপর্যস্ত করে। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। রোগী এবং তার পরিবারের দৃঢ় সংকল্প ও ধৈর্যের সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলে এই বিকৃতি থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য রোগীকে সামাজিক সহযোগিতা এবং পারিবারিক শান্তি দরকার। সমাজের সচেতনতা এবং সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গীও এ প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে। সুস্থ মানসিকতার অধিকারী হয়ে উঠতে পারলেই রোগী সামাজিক জীবনে স্বাভাবিক ভাবে মিলিয়ে যেতে পারবে। অতএব ক্লিপ্টোম্যানিয়া মোকাবেলায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। তবে এক্ষেত্রে রোগীর আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং পরিবার ও সমাজের সহযোগিতাই রোগ নিরাময়য়ের চাবিকাঠি।