নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয় (ডাঃ নওয়াব আলী প্রফেসরের বাসা), ৩৬৬, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
+৮৮০-১৭২০-৬৬৭১১৭
এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স (Acanthosis Nigricans)

আমাদের আশেপাশের অনেককেই আমরা এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখি। এটি ত্বকের সচরাচর দৃষ্ট সাধারন একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত স্থানের ত্বক কালোবর্ন এবং কখনো কখনো কালো মখমলের মতো অবস্থা ধারন করে, মনে হয় যেন ত্বকের স্থানটি পুড়ে গেছে।

(ছবিগুলো লক্ষ্য করলে পরিস্কার বুঝতে পারবেন), কখনো কখনো স্থানটি পুরু এবং মোটাও হয়ে যেতে পারে। এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স সাধারণত: বগল বা কুঁচকীর ভাঁজের ত্বকে, ঘাড়ের পেছনে এবং গালে হতে দেখা যায়। কখনো কখনো কনুই, হাঁটু এবং হাতপায়ের আঙ্গুলের উপরের অংশের ভাঁজে, কালো, ছোপছোপ আকারের হতে দেখা যায়।

দেখতে বিশ্রী লাগা ছাড়া সাধারনত: এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স ক্ষতিকর কোন সমস্যা নয় এবং ত্বকের বর্নবিকৃতি ছাড়া এর আর অন্য কোন লক্ষনও থাকে না, এমনকি চুলকানী, জ্বালা-ব্যথা,কষ্ট কিছুই না। তবে গবেষকদের মতে, অল্পবয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হলে “টাইপ টু” ডায়াবেটিস মেলিটাস (Type 2 Diabetes mellitus) হবার প্রচুর ঝুঁকি থাকে এবং কখনো কখনো (যদিও খুব কদাচিৎ ক্ষেত্রে) এটি আভ্যান্তরীন কোন অঙ্গের, যেমন পাকস্থলী, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদির ক্যান্সারের চিন্থ বহন করে।

কারন (Causation):

  • প্রকৃত কারণ অজানা।
  • বংশগত কারন।
  • হরমোন সংক্রান্ত ত্রুটি যথা থাইরয়েড অথবা এ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কার্যকারীতার হ্রাস। ডিম্বাশয়ের সিস্ট বা টিউমার।
  • অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত ইনসুলিন (Insulin) নামক হরমোনের অকার্যকারীতা।
  • বিভিন্ন ধরনের ঔষধ, যেমন উচ্চমাত্রার নিয়াসিন (High-dose Niacin), জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি (Birth control pills), প্রেডনিসলোন (Prednisolone) এবং বিভিন্ন ধরনের কর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids) দীর্ঘদিন ব্যবহারে এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স সৃষ্টি হতে পারে।

কারা অধিক আক্রান্ত হন (More affected peoples):

  • ৪০ বা তদূর্ধ বয়সীরা অধিক আক্রান্ত হন।
  • স্থুলকায় ব্যক্তিরা অধিক আক্রান্ত হন।
  • পুরুষরা অধিক আক্রান্ত হন, তবে নারীরাও আক্রান্ত হতে পারেন।
  • পরিবারে কারো এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মের এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স হবার ঝুঁকি থাকে।
  • কখনো কখনো শিশু এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স নিয়ে জন্মগ্রহন করতে পারে (Congenital Acanthosis)।

ক্লিনিক্যাল ফিচারস্ (Clinical features):

লক্ষন (Symptoms):

  • খুব ধীরে ধীরে রোগের সূত্রপাত হবে।
  • ত্বকের অনেকটা অংশ নিয়ে বাদামী বা লালোবর্নের দাগ দেখা দেবে, যা
  • ভেলভেটের মতো ত্বক থেকে বিচ্ছিন্নবর্নের হবে।
  • সাধারনতঃ এই সাথে শরীরের দুইদিকে সমানুপাতিকভাবে হবে।
  • শরীরের ভাঁজযুক্ত অংশে বেশী হবে।
  • চুলকানোর মতো অনুভূতি থাকতে পারে।
  • আক্রান্ত্র স্থান থেকে কখনো কখনো দূঃর্গন্ধ নিঃসরন হতে পারে।

চিন্থ (Signs):

ত্বকে কালো বা বাদামীবর্নের দাগ যা ভেলভেটের মতো এবং ত্বক থেকে আলাদা বর্নের। দেখে মনে হবে আক্রান্ত স্থানে ময়লা জমে আছে এবং দীর্ঘদিন অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় আছে। শরীরের যেকোন স্থানেই এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স হতে পারে তবে যে সকল অংশে সবচেয়ে বেশী হতে দেখা যায়, সেগুলো হলো,

  • বগল (Armpits)
  • আঙ্গুলের গিট (Knuckles)
  • গাল (Cheeks)
  • নারীর স্তনের নীচের ভাঁজে (Women's breasts beneth)
  • ঘাড়ের পেছনে (Back of the neck)
  • কুঁচকীতে (Groins)
  • কনুই -এ (Elbows)
  • হাঁটুতে (Knees)
  • স্ত্রী জননাঙ্গে (Female genitalia)

ব্যাবস্থাপনা (Management):

  • রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।

  • লক্ষন সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

  • ওজন নিয়ন্ত্রন করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।

  • অপ্রয়োজনীয় ঔষধ এবং বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টস্ (Supplements) সেবন পরিহার করতে হবে।

  • চিনিজাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।

পরিসমাপ্তি (Conclusion)

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। এ্যাকান্থোসিস নাইকিগ্র্যান্স - হলে ঘাবড়ানোর কোন কারনে নেই, কারন এটি নেহায়েতই সাধারন একটি সমস্যা। নিকটস্থ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন, তিনি আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত ইতিহাস, অতীত ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস, বংশগত রোগের ইতিহাস- ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, সুতরাং, সেভাবে প্রস্তুত হয়ে তাঁর কাছে নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আপনাকে যে সকল পরামর্শ দেবেন তা মেনে চলুন, সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশা-আল্লাহ।

যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়

ডা. রাতুল মাহমুদ সজল

বি.এইচ.এম.এস.

নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

About Author