বিশেষ কিছু খাদ্য, বিশেষ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কিছু খাদ্য, উৎস এবং উপাদনগতভাবেই এ্যালার্জেন (Allergen), যেমন ওল, কচু, মানকচু, কচুর লতি, কচুশাক ইত্যাদি। ওল, মান, কচু ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের ক্যালাস (Callus) (যারা প্রকৃতপক্ষে এদের রেচন পদার্থ, যাদের Raphides বলে) থাকে। এই ক্যালাসগুলো ভীষন সূক্ষ্ম ও সূঁচালোকার। সাধারণতঃ উচ্চতাপে এই রাফাইডস্গুলো গলে যায়; কিন্তু কমতাপে বা বাস্পে রান্না করা হলে এই ক্যালাসগুলোর সূঁচালো অংশ মুখে বা গলায় বিঁধে যায় এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে, এ্যালার্জির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিতান্তই কিছু সাধারণ খাদ্য যা এ্যান্টিজেন (Antigen) বা এ্যালার্জেন (Allergen) নয়, যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার পরে কোন ব্যক্তির মধ্যে এ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাকে আমরা ফুড এ্যালার্জি বলবো।
মনে রাখতে হবে
হাতে গোনা কিছু খাবার (Food) ছাড়া, পৃথিবীর যে কোন খাবারেই এ্যালার্জি (Allergy) হতে পারে। সহজ বিষয় হচ্ছে, ব্যক্তির Antibody যে খাদ্য বা খাদ্যের উপাদানকে Antigen বা Allergen মনে করবে, তাতেই তার এ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সুতরাং, Food allergy এর কোন সুনিদৃষ্ট তালিকা দেয়া নেহায়েতই বাতুলতা।
কারা অধিক আক্রান্ত হন (More prone to)
- যে কেউ যে কোন বয়সে আক্রান্ত হতে পারেন।
- নবজাতকরা গরুর দুধে এ্যালার্জির শিকার হতে পারে (তবে মায়ের বুকের দুধে শিশুর এ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভবনা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে)।
- ধনীরা অধিক আক্রান্ত হন।
- যাঁদের পরিবারে Food allergy থাকার ইতিহাস আছে তাঁরা অধিক আক্রান্ত হন।
- যাঁদের অন্য প্রকারের এ্যালার্জি আছে (ত্বকের, নাকের, চোখের ইত্যাদি) তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে।
- পরিপাকতন্ত্রের বিশেষ কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিক আক্রান্ত হন, যেমন সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac disease), ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (Irritable bowle syndrome), আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis), ক্রোন’স ডিজিজ (Crohn's disease) ইত্যাদি।
ক্লিনিক্যাল ফিচার’স (Clinical features)
লক্ষন (Symptoms)
বিশেষ কিছু খাদ্য গ্রহনের পর এবং সেটা প্রায় প্রতিবারই, রোগীর
☛. প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ দেখা দেবে।
☛. পেটব্যথা হবে।
☛. বমি এবং বমিভাব হবে।
☛. ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বা আমযুক্ত পায়খানা হবে।
☛. মুখগহ্বর এবং গলায় অস্বস্তিকর, ফুলে যাওয়ার মতো অুনুভূতি হবে।
☛. ঠোঁট, জিহ্বা, মুখগহ্বর, মুখমন্ডল, চোখের পাতা ফুলে যাবে, সুড়সুড় করবে এবং চুলকাবে।
☛. শ্বাসকষ্ট হতে পারে, নাকে সর্দি বা নাকের অবরুদ্ধ হতে পারে।
চিন্থ (Signs)
☛. পাতলা পায়খানা।
☛. বমি এবং বমিভাব।
☛. ঠোঁট, মুখমন্ডলের ফোলা ও লালভাব।
☛. ছোট ছোট শ্বাস।
জটিলতা (Complications)
এ্যনাফাইলেক্সিস (Anaphylaxis)।
“জেনে রাখা ভালো”
এ্যনাফাইলেক্সিস (Anaphylaxis): এ্যনাফাইলেক্সিস এ্যালার্জির তীব্র এবং মারাত্মক অবস্থা। এ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া (Allergic reaction) হবার কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যনাফাইলেক্সিস শুরু হয়, এক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, রোগী খুব ঘামতে থাকে, বমিভাব হয়, মূর্চ্ছা যাওয়ার মতো অনুভতি হয়, রক্তচাপ মারাত্মক রকম কমে যায়, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগী শক্- (Anaphylactic shock) এ চলে যায় এবং মৃত্যুবরণ করতে পারে।
ব্যবস্থাপনা (Management)
- রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।
- কারণতত্বের উপর নির্ভর করে সাদৃশ্য লক্ষনে প্রাথমিকভাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগের পর, রোগী উপশম হলে সামগ্রীক লক্ষনের ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন এবং প্রয়োগ করতে হবে।
- যে সকল খাবারে এ্যালার্জি সৃষ্টি হয় সেগুলো চিন্থিত করতে হবে।
- পরীক্ষায় দেখা গেছে, খাবারগুলো মাঝেমাঝে একটু একটু করে খেলে, ঐ খাবারের প্রতি শরীরে এ্যলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনা যায়। তবে এক্ষেত্রে একসাথে একাধিক এ্যলার্জিবর্ধক খাবার না খাওয়াই ভালো।
বিভিন্ন প্রকার এ্যালার্জি নিয়ে অন্যান্য ব্লগে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুনঃ
যে কোন সমস্যায় আপনার নিকটস্থ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক মঙ্গল কামনায়
বি.এইচ.এম.এস.
নওয়াব আলী হোমিও চিকিৎসালয়, বালুবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রাক্তন প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
3 thoughts on “এ্যালার্জি (Allergy), ফুড (Food)”